জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা ও ৩৫এ ধারা বাতিল করার পর দেশ জুড়ে রাজনৈতিক বিরোধীতা শুরু হয়েছিল। যার সমালোচনা দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশী সংবাদ মাধ্যম থেকে জনমানসে প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছিল। অদ্ভুত ব্যাপার হল, এই সমালোচনাকারীরা কখনও বিগত সাত দশক ধরে চলা লজ্জাজনক, বৈষম্যমূলক এবং অগণতান্ত্রিক নীতিতে চলা রাজ্যপাঠ পরিচালনা নিয়ে কখনও সংস্কার কিংবা বিলোপ অথবা উন্নয়নের কথা বলেনি ।
নরেন্দ্র মোদী ২০১৯ সালে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে অমিত শাহকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী করেন। অমিত শাহ দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হয়ে প্রথম সংসদ অধিবেশনেই চমক দিয়ে দেয়। যার ফলশ্রুতিতে অমিত শাহ দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবে সারা বিশ্বে পরিচিতি লাভ করেন। ৫ আগস্ট ২০১৯ জম্মু কাশ্মীরের অন্ধকার অধ্যায়ের পতন ঘটিয়ে জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বিলুপ্তির ঘটায় । আবির্ভাব হয় দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের - জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখ।
দু বছর আগে ৫ আগস্টে আকস্মিকভাবে নির্ভুল অস্ত্রোপচার। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের যুগলবন্দিতে নিপুণভাবে বাদ পড়েছিল ৩৭০ ধারা এবং ধারা ৩৫এ। সংবিধানের মূল ধারার বিরুদ্ধ কাজ হলেও শেষ পর্যন্ত কিন্তু জম্মু-কাশ্মীরের মাটিতে সারা দেশের নাগরিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। এর ফলে নিশ্চিত হয়েছে তাদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা।
সরকার সব রকম ভাবে চেষ্টা করেছে যাতে জম্মু কাশ্মীরে ভারতীয় সংবিধানে স্থাপিত সমতার নীতি রূপায়িত হয়। বিগত দুই বছরের পরিবর্তন গুলি আলোচনা করলে এটাই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সেই উন্নয়ন গুলো সামাজিক-রাজনৈতিক সমতার শিক্ষা, চাকরি, সংরক্ষণ ও অন্যান্য সুবিধায় ব্যাপ্ত। খতিয়ান বলছে, দু’বছরের মধ্যে এত কিছু করার মতন কঠিন কাজ করেছে মোদী সরকার । পরিনাম এটাই যে জম্মু কাশ্মীরের জন্য ৮৯০ টি কেন্দ্রীয় সরকারি আইন সম্পূর্ণরূপে প্রযোজ্য হয়েছে।
ভূস্বর্গে ১৭০ টি কেন্দ্রীয় আইন প্রয়োগ করায় তফসিলি জাতি ও তফসিলি উপজাতি (অত্যাচার প্রতিরোধ) আইন, 1993, Scheduled Tribes and Other Traditional Forest Dwellers (Recognition of Forest Rights) Act, 2007, National Commission for Minorities Act, and the Right of Children to Free and Compulsory Education Act, 2009 স্থাপিত হয়েছে।
তাহলে দ্বিতীয় বর্ষ পুর্তিতে অবধারিতভাবেই একটি প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে কংগ্রেস, বাম দল এবং অন্যান্য প্রাদেশিক দলের নেতৃবৃন্দকে। এতদিনে কেন এত গুরুত্বপূর্ণ আইন অনুমোদন করেনি তারা এবং একটি গোষ্ঠীকে এতদিন ধরে কেন বঞ্চিত করেছে। এটাও লক্ষণীয় বিষয় যে বিশেষ মর্যাদার অবলুপ্তির সাথে আরেকটি বৈষম্যমূলক আইনি বিধান যা জম্মু-কাশ্মীরের মহিলাদের রাজ্যের বাইরে বিয়ে করলে তাদের অধিকার খর্ব হয় এই আইনটি বন্ধ করা হয়েছে।
পূর্ববর্তী রাজ্যের প্রায় ১০,০০০ পৌর কর্মী (সাফাই কর্মচারী) দের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছিল তা ছিল অত্যন্ত লজ্জাজনক। তাদের নাগরিকত্ব, শিক্ষার সুযোগ এবং চাকরি থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল। এখন পৌরসভার কর্মীরা বৈধভাবে সেই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের বাসিন্দা হয়েছে এবং সমস্ত সুযোগ সুবিধা ভোগ করছে। অন্যান্য রাজ্যের মত দলিত এবং তফশিলি জাতিরাাও তাদের প্রাপ্য অধিকার পেয়েছে। এতবছর স্বাধীন গণতান্ত্রিক ভারতে এই ধরনের বৈষম্য কিভাবে ঘটতে পারে? নেহেরু, গান্ধী, আব্দুল্লাহ, মুফতি, কংগ্রেস পার্টি, কমিউনিস্ট এবং তাদের সমভাবাপন্ন দলের কাছে এর কি কোনো ব্যাখ্যা আছে? কেন কমিউনিস্টরা যারা নাকি তথাকথিত শ্রমিকশ্রেণীর সমব্যথী, জম্মু ও কাশ্মীরে দলিত সাফাই কর্মচারীদের দুঃখ-দুর্দশায় কর্ণপাত করেনি?
এছাড়াও বিগত ২৪ মাসে আরো বেশ কয়েকটি উন্নয়ন উল্লেখ করা যেতে পারে। এর মধ্যে প্রথমটি হল কাশ্মীরি পণ্ডিতদের পুনর্বাসন, যাদের ৩০ বছর আগে উপত্যকা থেকে জঙ্গিরা বিতাড়িত করেছিল। হিন্দু সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রায় ৪ লাখ কাশ্মীরিদের হত্যা ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ সত্তাকে কালিমালিপ্ত করেছে। এছাড়াও পশ্চিম পাকিস্তানের কুড়ি হাজারেরও বেশি শরণার্থী যাদেরকে নিজেদের দেশে এলিয়েন হিসেবে গণ্য করা হয়েছিল এবং যাদের সমস্ত অধিকার বাতিল করা হয়েছিল তাদের ও আবাসিক অধিকার এবং পরিবারপ্রতি ৫.৫০ লক্ষ টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
এই দুই বছরে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের গঠনের পর আরও অনেক কিছু ত্বরান্বিত হয়েছে। আবাসিক সার্টিফিকেট প্রদানের সহজ নিয়ম প্রণয়ন করা হয়েছে, যা সমস্ত বাসিন্দাদের একটি সমান মঞ্চ প্রদান করবে। স্থানীয় সরকারে ১০,০০০ শূন্যপদ পূরণের জন্য জম্মু ও কাশ্মীর সরকার ব্যাপক মাত্রায় নিয়োগ শুরু করেছে। ২৫,০০০ পদ পূরণের জন্য আরেকটি কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়াও তফসিলি জাতি, ওবিসি এবং অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল শ্রেণীর মতন জনগোষ্ঠী যারা অনেক সুবিধা থেকে বঞ্চিত তাদের চাকরির জন্য নিয়ম সংশোধিত হয়েছে।
অন্যান্য পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে তথ্য অধিকার আইন ২০০৫-এর প্রয়োগ দুর্নীতিবিরোধী মামলার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ভিজিলান্স কমিশনের সরাসরি তত্ত্বাবধান এবং Central Administrative Tribunal(CAT) র ১৮ তম বেঞ্চ গঠন জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের জন্য। লাদাখে একটি পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করার সিদ্ধান্ত এই অঞ্চলের মানুষের কাছে অত্যন্ত সমাদৃত হয়েছে। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ পূর্ববর্তী রাজ্যটির সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ করেছিল। তাই এটি অনিবার্য বলে মনে হয়েছিল। কেন্দ্রীয় সরকার লাদাখকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অসংখ্য ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
ইতিমধ্যে ব্যাপক পরিকাঠামো প্রকল্পের কাজ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। দুই বছর আগে সিপিএম জম্মু ও কাশ্মীর এর বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পদক্ষেপকে গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং সংবিধানের উপর আক্রমণ বলে অভিহিত করা হয়েছিল। “একটি জাতি বা দেশ মানুষ দিয়ে গঠিত জমির টুকরো দিয়ে নয়” - কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর এই বক্তব্য হাস্যরসের উদ্রেক করে। তাই যদি হয়, তাহলে কাশ্মীরি পন্ডিত, দলিত, উপজাতির লোক, পৌর শ্রমিকেরা কি মানুষের পর্যায়ে পড়ে না?
এই দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের আমূল পরিবর্তন আমাদের কংগ্রেস নেতৃত্তের ভয়াবহ ব্যর্থতার কথা স্পষ্ট করে দেয়। তাদের মধ্যে সংশোধন করার সাহস এবং আত্মবিশ্বাসের অভাব ছিল। ভীরুতাকে মহান রাজনীতির আখ্যা দেওয়া হয়। তার ফলে জম্মু ও কাশ্মীর ভারতীয় ঐতিহ্যের উদার ধর্মনিরপেক্ষ এবং গণতান্ত্রিক সত্তা থেকে পৃথক হয়েছিল।
নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে বিজেপি ছাড়া দেশের বাকি রাজনৈতিক দলগুলো অতীত আকড়ে থাকবে। দেশের উন্নয়ন বনাম নিজেদের ভুল রাজনীতির লড়াইয়ের মাঝে শৈল স্বর্গে নতুন যুগের উৎসব কতটা জনমুখী, তা সময় বলবে।
No comments