হলিউডের আদলে গৌতম বুধ নগর জেলায় নির্মিত নয়ডা ফিল্ম সিটি নির্মাণের প্রস্তুতি এখন জোরদার হয়েছে। এই ফিল্ম সিটি ৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে যমুনা সিটিতে এক হাজার একরে তৈরি হবে। এই ফিল্ম সিটিতে প্রায় ১৫ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে। যমুনা এক্সপ্রেসওয়ে ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (YEEDA) সেক্টর -২১ এ পিপিপি মডেলে নির্মিত ফিল্ম সিটির ডিটেইল প্রজেক্ট রিপোর্ট (ডিপিআর) অনুমোদন করেছে সরকার। এখন ডিপিআর তৈরীকারী কোম্পানি তিন সপ্তাহের মধ্যে বিড ডকুমেন্ট প্রস্তুত করবে, এর পর গ্লোবাল টেন্ডার জারি করা হবে। সবকিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী চললে আগামী বছরের প্রথম মাসে ফিল্ম সিটির নির্মাণ কাজ শুরু হবে। ফিল্ম স্টুডিও, ওপেন এরিয়া, বিনোদন পার্ক, ভিলা ইত্যাদি তৈরি করা হবে এই ফিল্ম সিটির প্রথম পর্যায়ে তিন ধাপে গড়ে তোলা হবে।
ইউপি -র এই প্রথম ফিল্ম সিটিতে বিশ্বমানের আধুনিক প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত করা হবে। কর্মকর্তারা বলছেন, এই ফিল্ম সিটির একটি বড় অংশ ডিজিটাল প্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত হবে। চলচ্চিত্রে ডিজিটাল মাধ্যমের ক্রমবর্ধমান প্রবণতার কারণে এটিকে বলা হবে ইনফোটেইনমেন্ট সিটি। এতে ধারাবাহিক ও চলচ্চিত্র, অ্যানিমেশন, ওয়েব সিরিজ, কার্টুন চলচ্চিত্র, প্রামাণ্যচিত্র, ডিজিটাল মিডিয়া ইত্যাদির শুটিংয়ের জন্য বিশেষ স্টুডিওর জন্য সকল প্রয়োজনীয় সুবিধা প্রদান করা হবে।
ফিল্ম সিটিতে ফিল্ম প্রোডাকশন স্টুডিও, আউটডোর লোকেশন, স্পেশাল ইফেক্ট স্টুডিও, হোটেল, ক্লাব হাউস, গ্রাম, কর্মশালা, পর্যটন ও বিনোদন, শপিং কমপ্লেক্স, ফুড কোর্ট, বিনোদন পার্ক, কনভেনশন সেন্টার এবং পার্কিং তৈরি করা হবে। ফিল্ম সিটি নির্মাণের জন্য ডিপিআর তৈরির জন্য সরকার কর্তৃক একটি স্বনামধন্য উপদেষ্টা সংস্থা নির্বাচন করা হয়েছিল।
এই ডিপিআরে উল্লেখ করা হয়েছে যে কোন আর্থিক মডেলের উপর ফিল্ম সিটি নির্মাণ করা উচিত। এই জন্য তহবিল ব্যবস্থা করার সূত্র কি হবে? ফিল্ম সিটির প্রথম পর্ব, দ্বিতীয় পর্যায় এবং তৃতীয় নির্মাণের ব্যয়ের চূড়ান্ত বিবরণ এবং নির্মাণের সময়সীমার বিস্তারিত বিবরণও ডিপিআরে রয়েছে।
নোডা ফিল্ম সিটির কার্যক্রম, রক্ষণাবেক্ষণ এবং ফিল্ম সিটি থেকে আয় এবং কর্মসংস্থানের বিবরণও ডিপিআরে উল্লেখ করা হয়েছে। কিভাবে এটিকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা যায়? ডিপিআরেও এর উল্লেখ আছে। দেশি -বিদেশি কোম্পানিগুলোও বৈশ্বিক টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারবে। ফিল্ম সিটি উৎপাদনকারী কোম্পানি দুই মাসের মধ্যে নির্বাচন করা হবে। নয়ডা ফিল্ম সিটি উৎপাদনকারী কোম্পানি, যা তিনটি পর্যায়ে বিকশিত হবে, ১ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করা হবে। ফিল্ম সিটি উৎপাদনকারী সংস্থার সঙ্গে ৪০ বছরের চুক্তি হবে। কোম্পানিকে লিজের পরিবর্তে লাইসেন্স দেওয়া হবে।
কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রথম ধাপে ছবির শুটিং সংক্রান্ত ৮০ শতাংশ অংশ প্রস্তুত করা হবে। তার পর আতিথেয়তা, রিসোর্ট এবং অন্যান্য ব্যবসায়িক কার্যক্রম গড়ে উঠবে। তৃতীয় পর্যায়ে খুচরা উন্নয়ন হবে।
এটি হাই-টেক এবং প্রযুক্তিতে সজ্জিত হবে। এখানে ৩ডি স্টুডিও থাকবে। সেখানে ৩৬০ ডিগ্রি ঘোরানো সেট থাকবে। এছাড়াও থাকবে সাউন্ড রেকর্ডিং, এডিটিং এবং অ্যানিমেশন স্টুডিও। এখানে একটি ফিল্ম ইউনিভার্সিটিও তৈরি করা হবে যেখানে শিক্ষার্থীরা চলচ্চিত্র নির্মাণের আধুনিক কৌশলে শিক্ষা লাভ করতে পারবে। এছাড়াও চলচ্চিত্র সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে গবেষণা হবে। বিজ্ঞাপনচিত্র তৈরির কৌশল বলা হবে। চলচ্চিত্র পর্যটনকে উৎসাহিত করতে বিশেষ স্টুডিও স্থাপন করা হবে। একটি সাধারণ সুবিধা কেন্দ্রও থাকবে যেখানে চলচ্চিত্র সম্পর্কিত সকল সুযোগ -সুবিধা পাওয়া যাবে। চলচ্চিত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এক ছাদের নিচে প্রয়োজনীয় সব সুযোগ -সুবিধা পেতে পারবে।
ফিল্ম সিটিতে শুটিংয়ের জন্য আসা অভিনেতা এবং কর্মীদের জন্য হোটেল (৫ স্টার এবং ৩ স্টার) নির্মিত হবে, এর বাইরে একটি বিলাসবহুল রিসোর্ট এবং বিনোদন পার্কও তৈরি করা হবে, যাতে মানুষ এখানে দিন কাটাতে আসতে পারে।
অতিরিক্ত মুখ্য সচিব নবনীত সেহগাল বলেন, আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র নগরী মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের স্বপ্নের প্রকল্প। ফিল্ম সিটি তৈরি হচ্ছে বিশ্বমানের। এতে অনেক সুযোগ -সুবিধার যত্ন নেওয়া হচ্ছে। এতে হাজার হাজার যুবকও কর্মসংস্থান পাবে।
No comments