নিউজ ডেস্ক: দেশের রাজধানী হওয়ার পাশাপাশি দিল্লি ভারতের অন্যতম প্রাচীন ও ঐতিহাসিক শহর। এই শহর অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী। পুরনো দিল্লি এখনও সেই যুগের অনেক স্মৃতি নিজের মধ্যে ধারণ করে আছে। আপনি যদি কখনও দিল্লির বিখ্যাত চাঁদনী চক বাজারে গিয়ে থাকেন, তাহলে আপনি নিশ্চয়ই সেখানে শত শত বছরের পুরনো ভবন দেখেছেন। 'চাঁদনী চক' মার্কেটেই আপনি এমন অনেক ভবন দেখতে পাবেন যার ইতিহাস খুবই স্মরণীয়। এক সময় এই এলাকাটি অনেক বিলাসবহুল হাভেলির জন্য বিখ্যাত ছিল। এই হাভেলিগুলো একসময় দিল্লী শহরের বৈশিষ্ট্য হিসেবে খুব বিখ্যাত ছিল। আজ এদের কিছু ভাঙ্গা এবং কিছু জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
১- মির্জা গালিবের হাভেলি
চাঁদনী চকের বালিমারনের গলি কাসিম জান -এ অবস্থিত এই সুন্দর প্রাসাদটি এক সময় দিল্লির গর্ব ছিল। ভারতের অন্যতম বিখ্যাত কবি মির্জা গালিবের এই সুন্দর প্রাসাদটি দুইতলা বিশিষ্ট। উনিশ শতকে 'মুঘল সুলতানি' এর পরিচয় গালিবের কবিতাগুলোর ঝলক এখনও এই হাভেলিতে দেখা যায়। নব্বইয়ের দশকে আশেপাশের দোকানগুলি দখলের কারণে হাভেলিটি ধ্বংসস্তূপে পড়েছিল। কিন্তু পরে এএসআই এটিকে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সংস্কার করে।
২- কোষাধ্যক্ষ হাভেলি
জামা মসজিদের কাছে গালী গুলিয়ানে অবস্থিত 'খাজাঞ্চি বা কোষাধ্যক্ষ হাভেলি' মুঘল আমলে শাহজাহানাবাদের গর্ব ছিল। মুঘল সম্রাট শাহজাহান তার কোষাধ্যক্ষের জন্য এই হাভেলিটি নির্মাণ করেছিলেন। লাল কেল্লার কাছাকাছি থাকার কারণে, এই হাভেলিটি একটি ভূগর্ভস্থ টানেলের মাধ্যমে লাল কেল্লার সাথে সংযুক্ত ছিল। এই সুন্দর হাভেলি, যা গত কয়েক দশক ধরে অচল হয়ে আছে, কয়েক বছর আগে তার পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে।
৩- চুন্নামালের হাভেলি
দিল্লির চাঁদনী চকে অবস্থিত 'চুন্নামাল কি হাভেলি' ১৮৪৮ সালে লালা রাই চুন্নামাল তৈরি করেছিলেন। চুনমাল ব্রিটিশ ভারতের প্রথম পৌর কমিশনার ছিলেন। তিনি দিল্লি শহরের প্রথম ব্যক্তি যিনি টেলিফোন এবং গাড়ী ব্যবহার করতেন। এখন চুন্নামালের দশম প্রজন্ম তার অট্টালিকার দেখাশোনা করছে। প্রায় ১ একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এই প্রাসাদটিতে মোট ১২৮ টি কক্ষ রয়েছে।
৪- হাকসার হাভেলি
এই প্রাসাদটি দিল্লির চাঁদনী চকেই অবস্থিত। ১৯ শতকের গোড়ার দিকে এটি 'সরুপ নারায়ণ কি হাভেলি' নামেও পরিচিত ছিল। চাওড়ি বাজার মেট্রো স্টেশনের বিপরীতে সীতারাম বাজারে অবস্থিত, এই ঐতিহাসিক হাভেলিটি আজ একটি আধা-আবাসিক এবং একটি আধা-বাণিজ্যিক কোয়ার্টারে বিভক্ত। এই প্রাসাদটি ১৯১৬ সালে সংস্কার করা হয়েছিল। প্রায় ২০০ বছরের পুরনো এই সুন্দর প্রাসাদে জওহরলাল নেহেরু কমলা কৌলকে বিয়ে করেছিলেন।
৫- বেগম সমরু কি হাভেলি
দিল্লির চাঁদনী চকে অবস্থিত এই বিলাসবহুল অট্টালিকা একসময় দিল্লির গর্ব ছিল। চাঁদনী চকের 'ভগীরথ প্রাসাদ' -এর কাছে অবস্থিত, এই সুন্দর হাভেলিটি একসময় নয়টি জাঁকজমক ঝর্ণাসহ একটি সুন্দর বাগান দ্বারা বেষ্টিত ছিল, কিন্তু আজ এটি চারদিক থেকে ঝোপে ঢাকা পরে জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ১৭৬৫ সালে, 'সর্ধনা সুলতানি' এর মালিক তার স্বামী ওয়াল্টার রেইনহার্ড সোমব্রে এর জন্য এই সুন্দর প্রাসাদটি কিনেছিলেন।
No comments