ভারতে ‘বাবু’ শব্দটি নানাভাবে ব্যবহৃত হয়। সরকারি অফিসের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে ছোট বাচ্চা পর্যন্ত প্রায়ই তাদের 'বাবু' নামে ডাকে। এমনকি নতুন যুগের প্রেমিক-প্রেমিকা একে অপরকে আদর করে 'বাবু', 'সোনা বাবু' নামে ডাকে । ইউপি বিহারে গেলে সেখানে সবাই একে অপরের জন্য 'বাবু' শব্দ বলে থাকে। কিন্তু 'বাবু' শব্দটি কোথা থেকে এসেছে এবং কে এই শব্দের উৎপত্তি করেছে কখনো জানার চেষ্টা করেছেন?
আসলে, আমরা ভারতীয়দের সবসময় এই অভ্যাস ছিল যে আমরা কিছু না ভেবেই পশ্চিমা সভ্যতা অনুসরণ করে নিজেদেরকে শ্রেষ্ঠ ভাবতে শুরু করি। আমরা প্রায়শই মনে করি যে বিদেশীরা যে কাজটি করছে তা সেরা। বিদেশী জামাকাপড় পরা থেকে শুরু করে ইংরেজিতে কথা বলা, কেউ কেউ এতে গর্ব করে। আজও ভারতে কেউ যদি স্যুট-বুট পরে অনর্গল ইংরেজিতে কথা বলে, তাহলে মানুষ সহজেই তার দ্বারা প্রভাবিত হয়। এর পেছনের কারণ আমাদের ইতিহাস, কারণ এই জিনিসের সঙ্গে 'বাবু' শব্দটিও যুক্ত।
'বাবু' শব্দের ইতিহাস খুবই মজার
এই শব্দের পেছনের ইতিহাস অনেক পুরনো এবং মজার। ১৮ শতকে ব্রিটিশরা ভারতে প্রবেশ করে। এই সময়ের পর তারা প্রায় ২০০ বছর ভারত শাসন করেন। ব্রিটিশ শাসনামলে, ব্রিটিশ অফিসাররা গৃহকর্মী হিসেবে শুধুমাত্র ভারতীয়দেরই তাদের বাড়িতে রাখতেন। বিনিময়ে ব্রিটিশরা তাদের ছেঁড়া জামা-কাপড়ের পাশাপাশি কিছু টাকা দিত এবং গৃহকর্মীদের এতেই আনন্দ পেত।
ব্রিটিশরা ভারতীয়দের নিয়ে মজা করত
ব্রিটিশদের দেওয়া পোশাক পরে, এই গৃহকর্মীরা প্রায়শই তাদের সাহেবকে অনুকরণ করতে শুরু করে এবং তাঁর মতো ভাঙা ইংরেজি বলার চেষ্টা করে। গৃহকর্মীর এই আচরণে ব্রিটিশরা বেশ মজা পেত। তার ঢিলেঢালা অমিল পোষাক এবং ভাঙা ইংরেজি শুনে ব্রিটিশরা তাকে 'বেবুন' বলে ঠাট্টা করত।
এই 'বেবুন' হয়ে গেল 'বাবু'
আমরা ভারতীয়রা মনে করতাম যে ব্রিটিশ অফিসার এবং তাদের স্ত্রীরা আমাদের খুব খুশি হয়ে আমাদের স্নেহের সাথে 'বেবুন' বলত। কিন্তু এই শব্দের সঠিক অর্থ তখন অধিকাংশ ভারতীয় জানতেন না। এরপর ব্রিটিশ অফিসাররা এই শব্দ দিয়ে গৃহকর্মীদের বাড়িতে ডাকতে শুরু করে। কালক্রমে এই ‘বাবুন’ শব্দটি ‘বাবু’ হয়ে ওঠে। এরপর কাউকে ভালোবেসে ডাকার সমার্থক হয়ে ওঠে ‘বাবু’ শব্দটি।
এছাড়া যাদের গায়ের গন্ধ ছিল তাদের জন্য বৃটিশরা বেবুন শব্দটি ব্যবহার করত। এর মধ্যে বেশিরভাগই ভারতীয় ছিলেন। কারণ সে সময় সবচেয়ে বেশি পরিশ্রম করতেন ভারতীয়রা। এ সময় তার ঘামের গন্ধে ব্রিটিশরা তাকে ‘বেবুন’ বলে ডাকতো। কিন্তু ঊনবিংশ শতাব্দীতে 'বাবু' শব্দটি ভিন্নভাবে ব্যবহৃত হতে থাকে।
স্বাধীনতার আগে ভারতে সমস্ত সরকারি কাজ 'কেরানিদের' মাধ্যমে করা হত। এ সময় সাধারণ মানুষ তাদের কাজ করিয়ে নেওয়ার জন্য ‘কেরানিদের’ খুশি করার জন্য তাকে আদর করে ‘বাবু’ বলে ডাকতে থাকে। ভারতে ধীরে ধীরে এই শব্দটি সরকারি অফিসে প্রচুর পরিমাণে ব্যবহৃত হতে থাকে। এই সময়ে, সিনিয়র অফিসারদের 'বড়া সাহাব' এবং কনিষ্ঠ অফিসারদের 'বাবু' বলা হত।
বিংশ শতাব্দীতে, এই শব্দটি সম্মান এবং সম্মানের চিহ্ন হয়ে ওঠে, যা আজ অবধি অব্যাহত রয়েছে। আজও ভারতের অনেক পরিবারে মানুষ বাবাকে 'বাবুজি' বলেও ডাকে। স্বাধীনতার পরও এ ধারা অব্যাহত ছিল। কিন্তু একবিংশ শতাব্দীতে এসে এই শব্দের অর্থ বদলে গেছে। বর্তমান যুগে ছোট বাচ্চাদের আদর করে 'বাবু' বলা হয়। এ ছাড়া প্রেমিক-প্রেমিকাও একে অপরকে আদর করে 'বাবু' বলে ডাকে।
No comments