পারিজাত, যা হরসিঙ্গার বা রাতের জুঁই ফুল বলেও পরিচিত। এছাড়াও এর আরও একটি পরিচিত নাম আছে, যা হল শেফালি। সুগন্ধি যুক্ত সাদা ও কমলার মিশ্রণ এই ফুলের গাছ গ্রামে গঞ্জে প্রায় সর্বত্র দেখা যায়। তবে কেবল সুগন্ধিই এই ফুলের একমাত্র বৈশিষ্ট্য নয়। এটি ঔষধি গুণে ভরপুর। এর পাতা, ছাল এবং ফুল সায়াটিকা, আর্থ্রাইটিস থেকে শুরু করে অন্ত্রের কৃমি পর্যন্ত অনেক রোগ নিরাময়ে সাহায্য করতে পারে।
পারিজাতের ঔষধি নাম Nyctanthes arbor-tristis এবং এটি শুধুমাত্র রাতে ফোটে এবং সকালে এর সমস্ত ফুল ঝরে যায়। আর তাই এটি রাত কি রানি নামেও পরিচিত।
আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞ ডাঃ দিক্সা ভাবসার বলেন, "হরসিঙ্গার বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য উপকারী একটি উদ্ভিদ। হরসিঙ্গার গাছের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য এটিকে মানুষের স্বাস্থ্য ও সুস্থতার জন্য আশীর্বাদ করে তোলে।" গাছের পাতা ব্যবহার করা হয় দীর্ঘস্থায়ী জ্বর, রিউম্যাটিজম, আর্থ্রাইটিস, জয়েন্টে ব্যথা, অস্থির সায়াটিকা ইত্যাদির মতো চিকিৎসায়।
ডাঃ ভাবসার গাছের পৌরাণিক তাৎপর্য নিয়েও কথা বলেছেন। "এটি হিন্দু পুরাণে উল্লিখিত একটি পবিত্র গাছ। পৌরাণিক কাহিনী বলে যে, ভগবান শ্রী কৃষ্ণ তার প্রিয় স্ত্রী সত্যভামার জন্য স্বর্গ থেকে এই গাছটি নিয়ে এসেছিলেন। এটি স্বর্গে বিদ্যমান পাঁচটি গাছের একটি, বলেছেন আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞ।
ডাঃ ভাবসার বিভিন্ন স্বাস্থ্য অবস্থার জন্য পারিজাত বা হরসিঙ্গার ব্যবহার করার নির্দেশনাও দেন।
ব্যবহারবিধি:
* সায়াটিকার জন্য: ৩-৪টি পাতা পিষে নিয়ে জল দিয়ে ফুটিয়ে নিন এবং খালি পেটে দিনে দুবার পান করুন।
* ফোলা ও ব্যথার জন্য: জলে পাতা সিদ্ধ করে ক্বাথ তৈরি করে পান করুন।
বাতের জন্য: পাতা, ছাল, ফুল (পারিজাতের) প্রায় ৫ গ্রাম নিন এবং ২০০ লিটার জল দিয়ে একটি ক্বাথ তৈরি করুন। জল প্রাথমিক পরিমাণের ১/৪ পরিমাণে কমে গেলে মনে করবেন ক্বাথ তৈরি।
* শুষ্ক কাশির জন্য: পাতা পিষে রস বের করে মধুর সাথে পান করুন।
* সর্দি/কাশি/সাইনাসের জন্য: এটি চা হিসাবে পান করুন। এক গ্লাস জলে ২-৩টি পাতা এবং ৪-৫টি ফুল ফুটিয়ে তাতে ২-৩টি তুলসী পাতা মিশিয়ে চা হিসেবে পান করুন।
* অন্ত্রের কৃমির জন্য: পাতা পিষে ২ টেবিল চামচ রস বের করে মিছড়ি ও জলের সাথে পান করুন।
* রিং ওয়ার্মের (দাদ) জন্য: আক্রান্ত স্থানে পাতার পেস্ট লাগান।
* জ্বরের জন্য: গাছের ৩ গ্রাম ছাল ও 2 গ্রাম পাতার সঙ্গে তুলসীর ২-৩ টি পাতা মিশিয়ে জলে ফুটিয়ে দিনে দুবার পান করুন।
* উদ্বেগের জন্য: রাতের জুঁই তেল অ্যারোমাথেরাপিতে স্ট্রেস এবং উদ্বেগ দূর করতে ব্যবহার করা হয়। এটি আপনার মস্তিষ্কে সেরোটোনিনের মাত্রা বাড়ায় এবং মেজাজ নিয়ন্ত্রণ করে, যাতে আপনি খুশি বোধ করেন।
এসবের পাশাপাশি ডঃ ভাবসার সতর্ক করে "এটি আপনার শরীরের জন্য উপযুক্ত কিনা তা জানতে, এটি ব্যবহার করার আগে সর্বদা একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।"
No comments