অতিরিক্ত পরিমাণে কফি পান করা শরীরে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে, একথা বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে। কিছু গবেষণা দাবী করছে যে, যারা অতিরিক্ত পরিমাণে কফি পান করেন, তারা অনিদ্রা, ডিমনেশিয়া এবং এমনকি বন্ধ্যাত্বের মত কঠিন সমস্যার মুখোমুখিও হতে পারেন। কিন্তু কফি কি আসলেই ক্ষতিকর? একদল স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ কিন্তু অন্য কথা বলছেন। তাদের কথানুযায়ী, কফি ক্ষতিকারক নয় বরং শরীরের জন্য অনেক ক্ষেত্রে উপকারী প্রমাণিত হতে পারে। সাম্প্রতি করা এক গবেষণায় বিজ্ঞানীরা কফি পান করার উপকারিতার কথা উল্লেখ করেছেন।
ইউরোপিয়ান সোসাইটি অফ কার্ডিওলজির বার্ষিক সভায় উপস্থাপিত একটি গবেষণার প্রতিবেদনে গবেষকরা জানিয়েছেন যে, পরিমিত পরিমাণে কফি পান করলে বিভিন্ন ধরনের উপকার হতে পারে। সীমিত পরিমাণে কফি মানে দিনে তিন কাপ পর্যন্ত। গবেষকরা বলছেন যে, কফি পান হৃদরোগের কারণে কম বয়সীদের মৃত্যুর ঝুঁকি ১২ শতাংশ কমিয়ে দিতে পারে। শুধু তাই নয়, এটি টাইপ -২ ডায়াবেটিসের মতো মারাত্মক রোগেও খুব উপকারী বলে জানানো হয়েছে। এছাড়াও সেই গবেষণায় কফি পানের আর কী কী উপকারিতার কথা বলা হয়েছে এবং কোন পরিস্থিতিতে কফি পান করা সবচেয়ে বেশি উপকারী হতে পারে, আসুন দেখে নেওয়া যাক।
কফির সম্ভাব্য স্বাস্থ্য উপকারিতা জানতে, এই বিষয়ে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় গবেষণা করা হয়েছে। এই গবেষণায়, গবেষকরা ৪.৬৮ লক্ষেরও বেশি লোকের তথ্য পরীক্ষা করেছেন। এমআরআই স্ক্যান রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে, গবেষকরা দেখেছেন যে যারা দিনে প্রায় তিন কাপ কফি পান করেন, তাদের হৃদয়ের স্বাস্থ্য অন্যান্যদের তুলনায় অনেক ভালো থাকে। যদিও, এই গবেষণা শুধু হৃদযন্ত্রের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে কফির উপকারিতা কী- এটা দেখা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ সীমাবদ্ধ ছিল না। গবেষকরা এর আরও অনেক উপকারিতার কথাও বলেছেন। যেমন-
টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী হতে পারে
গবেষকরা বলছেন যে কফি পান করা টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও খুব উপকারী হতে পারে। এই ধরণের ডায়াবেটিসে মেটাবলিক সিনড্রোম অন্যতম প্রধান অন্তর্নিহিত কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়। ২০১৭ সালে করা এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যারা দিনে চার থেকে ছয় কাপ কফি পান করেন, তাদের মেটাবলিক সিনড্রোমের ঝুঁকি কম থাকে। ফলে এই ধরনের লোকদের মধ্যে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে যেতে পারে।
ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতেও সক্ষম
গবেষকরা বলছেন যে, কফি পান করলে লিভার ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে যেতে পারে। ২০১৯ সালে করা একটি গবেষণার পর্যালোচনা অনুসারে, নিয়মিত কফি পান লিভারের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে পারে। ইতালীয় গবেষকরা একটি গবেষণায় দেখেছেন যে যারা দিনে তিন কাপ কফি পান করেন, তাদের লিভার ক্যান্সারের ঝুঁকি ৫০ শতাংশ কম থাকে।
কফি মানসিক রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে
কফি অনেক ধরনের মানসিক রোগ প্রতিরোধেও উপকারী বলে দাবী করা হচ্ছে। গবেষকরা বলছেন যে, যারা নিয়মিত কফি পান করেন, তাদের আল্জাইমার এবং ডিমনেশিয়ার ঝুঁকি কম হতে পারে। এই দুটি রোগই নিউরোডিজেনারেটিভ ডিসঅর্ডার, যা সাম্প্রতিক সময়ে দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বেশ কয়েকটি গবেষণার ফলাফলের উপর ভিত্তি করে গবেষকরা বলছেন যে, যারা নিয়মিত কফি পান করেন, তাদের আল্জাইমার এবং ডিমনেশিয়ার ঝুঁকি ৬৫ শতাংশ পর্যন্ত কম হতে পারে।
No comments