আমাদের ত্বক নানা কারণে উজ্জ্বলতা হারায়। এই যে পুজোর সময় আপনি যেমন ইচ্ছে তেমন খেয়েছেন, মোটেই ব্যায়াম করেননি বরং বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে দেদার আড্ডা মেরে সময় কাটিয়েছেন, ঘণ্টার পর ঘণ্টা ওয়েব সিরিজ় দেখেছেন বা দিনের বেলায় পাড়ার প্যান্ডেলে বসে গুলতানি করেছেন তার সব কিছুর প্রভাবই ত্বকের উপর পড়েছে। ফলে আপনার স্বাভাবিক রং হারিয়েছে জেল্লা, তার উপর উৎসবের মরশুমে ঘাটতি পড়ে ঘুমেও। মনে রাখবেন, ঘুম কম হলেই কিন্তু আপনার ত্বক ঔজ্জ্বল্য হারাতে বাধ্য। সেই সঙ্গে বাতাসের দূষণের প্রভাব তো আছেই! বাজারচলতি ক্রিম বা মহার্ঘ্য ফেশিয়াল ট্রাই করে দেখতেই পারেন, তবে তার চেয়ে কোনও অংশেই পিছিয়ে থাকবে না পরিচিত ঘরোয়া সমাধানগুলি।
ঘরোয়া টোটকায় তো আর ক্ষতিকারক রায়াসনিক থাকে না, তা কোমলভাবে আপনার ত্বককে উজ্জ্বল করে তোলে। তবে এগুলি ট্রাই করার পাশাপাশি প্রতিদিন সুষম খাবার খাওয়ার ব্যাপারে যত্নশীল হয়ে উঠতে হবে, খাদ্যতালিকায় যেন প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেলের অভাব না থাকে তা দেখতে হবে। দূরে থাকুন অতিরিক্ত তেল-মশলা থেকে। সেই সঙ্গে যথেষ্ট বিশ্রাম প্রয়োজন। পাশাপাশি চেষ্টা করুন সারাক্ষণ অ্যাকটিভ থাকার। সকালবেলা আধ ঘণ্টা ব্যায়াম করার পর যদি সারাক্ষণ একটি চেয়ারে ঠায় বসে থাকেন, তা হলে কিন্তু আপনার ত্বকও মুষড়েই থাকবে। হাঁটাচলা করতে হবে সারাদিন – অফিসেও নিজের চা বা জলখাবার নিজে আনুন, জলের বোতল ভরার জন্য সিট ছেড়ে উঠুন।
এর পাশাপাশি তিনটি বিষয়ের উপর গুরুত্ব দিন। প্রথমটি এক্সফোলিয়েশন। নিয়ম করে ব্যবহার করুন প্রাকৃতিক এক্সফোলিয়েটর – তাতে ত্বকের উপর মরা কোষের পরত জমতে পারবে না ও ত্বক ঝলমল করবে। দ্বিতীয়ত, অতি অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন দিনের বেলায়। যাঁরা অফিসে কাচের জানলার পাশে বসেন, তাঁরাও দিনের আলো থাকাকালীন বেশ কয়েকবার সানস্ক্রিন লাগান। রোদের প্রভাবে যেন আপনার স্বাভাবিক জেল্লা না হারায়, সে বিষয়টি নিশ্চিত করার দায়িত্ব আপনারই। সেই সঙ্গে প্রচুর জল খেতে হবে। ত্বক আর্দ্র থাকলে চট করে বলিরেখা পড়বে না, থাকবে টানটান। ত্বকের ইলাস্টিসিটি কমতে আরম্ভ করলেই তার জেল্লা হারাতে আরম্ভ করে।
শসা: ত্বকের যে কোনও প্রদাহ কমাতে শসার ব্যবহার বহুল প্রচলিত। সেই সঙ্গে চোখের কোলের কালি তাড়াতেও শসার রস কার্যকর বলে মনে হয় অনেকের। শসার রস ব্যবহার করুন প্যাকে, সরাসরিও লাগাতে পারেন।
পাতিলেবুর রস: লেবুর রস প্রাকৃতিক ব্লিচ হিসেবে অনেকেই ব্যবহার করেন। কিন্তু মনে রাখবেন, সরাসরি লেবুর রস ত্বকে লাগানো অনুচিত। এর প্রভাবে ত্বক সাঙ্ঘাতিক সেনসিটিভ হয়ে পড়ে, তীব্র জ্বালাভাবও টের পেতে পারেন। তাই সরাসরি লেবুর রস না লাগিয়ে তা আপনার ফেস প্যাকের অন্যতম অঙ্গ হিসেবে ব্যবহার করুন। ফুল ফ্যাট দুধ, বেসন বা আটা আর লেবুর রসের প্যাক সাধারণত সব ধরনের ত্বকেই ভালো কাজ করে। তবে লেবুর রস ব্যবহার করার পর অতি অবশ্যই ভালো কোনও ময়েশ্চরাইজ়ার লাগান। তা না হলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যাবে ক্রমশ।
দুধ/ দই আর মধু: দুধ আর দইয়ে উপস্থিত এনজ়াইম আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়িতে তুলতে দারুণ কার্যকর আর মধু কাজ করে প্রাকৃতিক ময়েশ্চরাইজ়ার হিসেবে। এই দু’টি মিশিয়ে নিয়ে ত্বকে লাগিয়ে নিন এবং মিনিট ২০ পর ধুয়ে নিতে হবে। প্রতিদিন রাতে লাগাতে পারেন। মুখ ধুয়ে নিয়ে অবশ্যই ময়েশ্চরাইজ়ার লাগাতে হবে।
টোম্যাটো: টোম্যাটোর লাইকোপিন ত্বকে বয়সের আক্রমণ ঠেকিয়ে রাখতে দারুণ কার্যকর। তা ছাড়া এর অ্যান্টিঅক্সিডান্ট বাড়িয়ে তোলে ত্বকের উজ্জ্বলতাও। সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার ফেস প্যাকে টোম্যাটো ব্যবহার করতে পারেন, সেই সঙ্গে খানিকটা ওটমিল মিশিয়ে নিন – ত্বক ঝকঝকে পরিষ্কার হয়ে উঠবে। আধ ঘণ্টা পর প্যাকটা ধুয়ে নিয়ে ময়েশ্চরাইজ়ার লাগিয়ে নিন। অতি অবশ্যই তার পর সানস্ক্রিন লাগাতে হবে।
চন্দন: ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে তুলতে চন্দনের কোনও তুলনা নেই! বলা হয়, চন্দনে উপস্থিত টাইরোসিনেস মেলানিনের উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দিতে পারে। চন্দনের সঙ্গে আমন্ড পাউডার আর দুধ মিশিয়ে প্যাক বানিয়ে ব্যবহার করুন, ত্বক একেবারে ঝলমলিয়ে উঠবে! সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার ব্যবহার করা যায়। তবে যাঁরা প্রথমবার চন্দন ব্যবহার করছেন, তাঁরা অবশ্যই একবার প্যাচ টেস্ট করে নিন। অনেকের চন্দনে অ্যালার্জি হয়।
হলুদ: কাঁচা হলুদের নিয়মিত ব্যবহার আপনার ত্বককে সুস্থ রাখে ও ধীরে ধীরে উজ্জ্বল করে তোলে। তার আপনার ফেস প্যাকে কাঁচা হলুদ ব্যবহার করতে ভুলবেন না যেন!
অ্যালো ভেরা: অ্যালো ভেরা পাতা চিরে মাঝের থেকে শাঁসটা বের করে নিন। তার মধ্যে হলুদ আর লেবুর রস দিয়ে প্যাক তৈরি করুন। এক দিন অন্তর অন্তর ব্যবহার করতে পারেন এই প্যাক। আধ ঘণ্টা রেখে মুখ থেকে তুলে ময়েশ্চরাইজ়ার লাগিয়ে নিন।
No comments