জানেন কি, প্রতি ২৭ দিন অন্তর আমাদের ত্বক নতুন জীবন পায়? অর্থাৎ প্রতি ২৭ দিন পরপর ত্বকের উপরের মৃত কোষ উঠে গিয়ে সেখানে জন্ম নেয় নতুন কোষ। কিন্তু এই মৃত কোষ ত্বকের সঙ্গেই আলগাভাবে লেগে থাকে, ফলে ত্বক বিবর্ণ ও নিষ্প্রাণ দেখায়। নিয়মিত এক্সফোলিয়েশনের মাধ্যমে ত্বকের মৃত কোষ তুলে না ফেললে ত্বকের নানা সমস্যা দেখা দেয়। শুধু ব্রণ ফুসকুড়িই নয়, খুসকি ও চুল উঠে যাওয়ার মতো সমস্যা তৈরি হওয়াও বিচিত্র নয়।
অর্থাৎ এক্সফোলিয়েশনই একমাত্র পথ। আর শুধু মুখ নয়, সারা শরীরেরই এক্সফোলিয়েশন প্রয়োজন কারণ মৃত কোষ তো আপনার সারা শরীরেই জমা হয়। এবার কোনও একটি পদ্ধতিতে সারা শরীরের এক্সফোলিয়েশন সম্ভব নয়। মুখে যেমন আপনি পিউমিস স্টোন ব্যবহার করতে পারবেন না, তেমনি মুখের স্ক্রাব দিয়ে গোড়ালির মৃত কোষ তোলাও যাবে না। এখানে রইল শরীরের পাঁচটি প্রধান অংশ এক্সফোলিয়েট করার হদিশ।
স্ক্যাল্প এক্সফোলিয়েশন
কোমল শ্যাম্পু দিয়ে মাথায় হালকা হাতে মাসাজ করুন। এতে স্ক্যাল্পের মৃত কোষ উঠে যাবে, মাথায় রক্ত সঞ্চালন বেড়ে চুলের গোড়া মজবুত হবে, খুসকিও কমবে। তা ছাড়া মাথার জন্য বানিয়ে নিতে পারেন ঘরোয়া স্ক্যাল্প স্ক্রাব।
আপনার দরকার দুই টেবিলচামচ ব্রাউন সুগার, দু’ টেবিলচামচ মিহি করে গুঁড়ো করা ওটমিল আর দু’ টেবিলচামচ কন্ডিশনার। এই তিনটি উপাদান একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। শ্যাম্পু করার পর এই মিশ্রণটি দিয়ে মাথায় মাসাজ করুন। তারপর ভালো করে ধুয়ে ফেলুন।
মুখের এক্সফোলিয়েশন
মুখে মৃত কোষ জমতে থাকলে তা রোমছিদ্র বন্ধ করে দিতে পারে আর তার অবশ্যম্ভাবী ফল ব্রণর হামলা। সপ্তাহে দু’বার ফেস স্ক্রাব ব্যবহার করতে পারলে সহজেই দূরে রাখা যায় এই সমস্যা। মুখ ধোওয়ার পর এক টেবিলচামচ নারকেল তেল আর দু’ টেবিলচামচ চিনি মিশিয়ে তা দিয়ে এক মিনিট মুখে মাসাজ করুন। তাড়াহুড়োর মধ্যে চটজলদি মুখ এক্সফোলিয়েট করতে হলে এটি খুবই কার্যকর স্ক্রাব!
ঠোঁটের এক্সফোলিয়েশন
খুব গরমে বা খুব ঠান্ডায় ঠোঁটে মৃত কোষ জমতে পারে। নিয়মিত এক্সফোলিয়েট করে ঠোঁট নরম রাখতে পারলে লিপস্টিকের রংও খোলে ভালো। ঠোঁটের স্ক্রাব তৈরি করতে আপনার দরকার দু’ টেবিলচামচ চিনি, এক চাচামচ মধু, এক চাচামচ অলিভ অয়েল আর এক ফোঁটা পেপারমিন্ট অয়েল। সবক’টা উপাদান একসঙ্গে মিশিয়ে ছোট বোতলে ভরে ফ্রিজে রেখে দিন। ঠোঁট এক্সফোলিয়েট করার সময় একটা নরম কাপড় গরমজলে ভিজিয়ে মিনিট পাঁচেক ঠোঁটে চেপে রাখুন, এতে ঠোঁট নরম হয়ে আসবে। তারপর মিশ্রণটি ঠোঁটের উপর পুরু করে লাগিয়ে আরও মিনিট পাঁচেক রাখুন। তারপর হালকা হাতে স্ক্রাব করে মৃত কোষ উঠিয়ে ফেলুন। সবশেষে হালকা গরমজলে ঠোঁট ধুয়ে নিন।
শরীরের এক্সফোলিয়েশন
স্নানের সময় সারা শরীরের এক্সফোলিয়েশন করার জন্য সাবান যেমন পাওয়া যায়, তেমনি এক্সফোলিয়েটিং বডিওয়াশও পাওয়া যায় বিস্তর। এই সাবান বা বডিওয়াশ শরীরের ত্বক পরিষ্কার যেমন করে, তেমনি এক্সফোলিয়েটও করে। যদি বাজারচলতি জিনিস ব্যবহার করতে ইচ্ছে না হয়, তা হলে বাড়িতেও বানিয়ে নিতে পারেন। আপনার দরকার সিকি কাপ গুঁড়ো কফি, সিকি কাপ চিনি, দু’ টেবিলচামচ অলিভ অয়েল বা নারকেল তেল আর চারটে ভিটামিন ই ক্যাপসুল। কফি, চিনি আর তেল একসঙ্গে মিশিয়ে তাতে ভিটামিন ই ক্যাপসুলগুলো কেটে ভিতরের তরলটাও দিয়ে দিন। এরপর আবার ভালো করে মিশিয়ে এই মিশ্রণ দিয়ে সারা গা ভালো করে ঘষে ঘষে পরিষ্কার করে হালকা গরমজলে ধুয়ে ফেলুন।
গোড়ালির এক্সফোলিয়েশন
গোড়ালির ত্বক একদিকে যেমন পুরু আর শক্ত, তেমনি তা শুষ্কও হয়ে যায় খুব তাড়াতাড়ি। গোড়ালির উপযুক্ত স্ক্রাব তৈরি করতে আপনার দরকার দু’ কাপ ব্রাউন সুগার, আধকাপ নারকেল তেল আর দু’ তিন ফোঁটা পেপারমিন্ট অয়েল। সবক’টা উপাদান একসঙ্গে মিশিয়ে পায়ে লাগান। মিনিটকয়েক বসতে দিন, তারপর ভালো করে মাসাজ করিন। সব শেষে গরমজলে ধুয়ে ফেলুন। এতে গোড়ালির মৃত কোষ উঠে যাবে, আর তার সঙ্গে ত্বক নরম ও আর্দ্রও থাকবে!
No comments