ধুলোবালি, রোদবৃষ্টি, দূষণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় আমাদের ত্বক, বিশেষ করে মুখের ত্বক। নিয়মিত ক্লেনজিং টোনিং-ময়শ্চারাইজিংয়ের রুটিন দিয়ে সে ক্ষতি সামাল দেওয়া সম্ভব নয়! বরং দরকার আর একটু বেশি যত্নের। তবে তার জন্যও যে বিরাট কাঠখড় পোড়াতে হবে তাও নয়। একটু সচেতনতা আর একটু সময় দিতে পারলেই আপনার ত্বক থাকবে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল, তরতাজা!
ঘুমোনোর আগে মেকআপ তুলুন
এটাই ত্বক সুস্থ রাখার অন্যতম গোল্ডেন রুল। যত ক্লান্তই থাকুন, বাড়ি ফিরতে যত রাতই হোক, ত্বক খুব ভালো করে পরিষ্কার করতেই হবে, যাতে মেকআপের ছিটেফোঁটাও না থাকে! পরিষ্কার ত্বক সারা রাত শ্বাস নিতে পারে। মেকআপ ঠিকমতো পরিষ্কার না হলে রোমছিদ্রগুলো বন্ধ হয়ে যায়, তাতে নোংরা জমে মুখে ব্রণ আর দাগছোপ দেখা দেয়।
বিশেষ টোটকা: আলাদা করে মেকআপ রিমুভার কেনার দরকার নেই। ভার্জিন অলিভ অয়েল বা কোল্ড-প্রেসড নারকেল তেলে তুলো ভিজিয়ে তা দিয়ে মেকআপ তুলুন।
নিয়মিত এক্সফোলিয়েশন
জমে যাওয়া মৃত কোষ দূর করে ত্বকে স্বাস্থ্যের দীপ্তি ফিরিয়ে আনতে নিয়মিত এক্সফোলিয়েশন মাস্ট! এক্সফোলিয়েশন স্ক্রাব দোকান থেকেও কিনতে পারেন, আবার নিজেও বানিয়ে নেওয়া যায়। আখরোট দিয়ে যেমন খুব ভালো স্ক্রাব তৈরি করে নিতে পারেন। দু’টেবিলচামচ আখরোট গুঁড়োর সঙ্গে দু’টেবিলচামচ টক দই মিশিয়ে পেস্ট করে নিন। মুখে লাগিয়ে আধ ঘণ্টা রাখুন। পেস্টটা মুখে শুকিয়ে উঠতে শুরু করবে। হালকা হাতে মাসাজ করুন, তারপর ঈষদুষ্ণ গরম জল দিয়ে ধুয়ে তুলে দিন। নিয়মিত এক্সফোলিয়েশনে ত্বক ক্রমশ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।
বিশেষ টোটকা: দইয়ের বদলে মধু বা দুধের সরও ব্যবহার করতে পারেন!
রোদ থেকে সুরক্ষা
ভারতের মতো নিরক্ষীয় অঞ্চলে ত্বকের বারোটা বাজিয়ে দিতে পারে চড়া রোদ। চোখে দেখা না গেলেও চড়া রোদ থেকে ত্বকের অসম্ভব ক্ষতি হয়। পর্যাপ্ত এসপিএফ যুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন, যাতে আলট্রা ভায়োলেট এ আর বি, দুটোই প্রতিহত করা সম্ভব হয়। নিয়মিত সানস্ক্রিনের ব্যবহার মুখে বয়সের দাগ, বলিরেখা হওয়া আটকাবে, রোদজনিত কালো দাগছোপও এড়িয়ে চলতে পারবেন।
বিশেষ টোটকা: ঘরের ভিতরে থাকার সময়ও সানস্ক্রিন লাগান, কারণ অতিবেগুনি রশ্মি ঘরের ভিতরেও সক্রিয় থাকে।
সুষম খাবারের উপর জোর দিন
শুধু ত্বকই নয়, সামগ্রিক স্বাস্থ্য ধরে রাখতেও খাবারের ভূমিকা সবচেয়ে জরুরি। প্রতিদিন টাটকা ফল আর শাকসবজি খান। খাদ্যতালিকায় পরিমাণমতো প্রোটিন থাকাও খুব দরকার। কমিয়ে আনুন অতিরিক্ত ফ্যাট আর চিনিযুক্ত খাবার। এতে শরীরের পাশাপাশি ত্বকও ভালো থাকবে।
বিশেষ টোটকা: খাবারে চিনির পরিমাণ কম থাকলে ত্বক উজ্জ্বল দেখায়।
পর্যাপ্ত জল
খাবারের পরেই আসবে জল। প্রতিদিন অন্তত দু’ লিটার (আট গেলাস) জল খাওয়া খুব জরুরি। তরমুজ, শসা, লেবুর মতো রসালো ফল খান। স্ট্রবেরি, কমলালেবু, শসার নির্যাস মেশানো জলও খেতে পারেন।
বিশেষ টোটকা: ত্বকের যত্নে গোলাপজলকে কখনও বাদ দেবেন না। গোলাপজল ত্বকের পিএইচ ব্যালান্স রক্ষা করে, ত্বককে প্রাকৃতিক উপায়ে আর্দ্রও রাখে।
নিয়মিত ব্যায়াম করুন
ব্যায়াম আপনার রক্ত সংবহন প্রক্রিয়াটি জোরদার করে তোলে। যে ব্যায়াম করতে ভালো লাগে, সেটাই করুন। হাঁটা, জগিং, সাইকেল চালানো, যোগব্যায়াম, সব কিছুই চলতে পারে। তাতে আপনার পেট পরিষ্কার থাকবে, ত্বকও দীপ্তিময় হয়ে উঠবে।
বিশেষ টোটকা: ব্যায়ামের পর স্নান করে ময়শ্চারাইজ়ার মেখে নিতে ভুলবেন না!
নজর দিন বিউটি স্লিপে
শরীর আর মন সুস্থ রাখতে ঘুমেরও কোনও বিকল্প নেই। প্রতিদিন অন্তত আট ঘণ্টা নিশ্চিন্ত ঘুমের প্রয়োজন। ঠিকমতো না ঘুমোলে ত্বকে ক্লান্তির ছাপ পড়ে, চোখের কোল আর গাল ফোলা ফোলা দেখায়।
বিশেষ টোটকা: শুতে যাওয়ার অন্তত আধ ঘণ্টা আগে সমস্ত ইলেকট্রনিক গ্যাজেট (টিভি, ফোন, ট্যাবলেট) বন্ধ করে দিন।
আটকে দিন ব্রণ
নিয়মিত ত্বক পরিষ্কার করলে ব্রণর উপদ্রব অনেকটাই কমে যাবে। পাশাপাশি হালকা গরম জল দিয়ে দিনে একবার, কি দু’বার মুখ ধুয়ে ফেলতে পারলে ভালো হয়। ডিপ ক্লেনজ়িংয়ের জন্য মুখে ক্লেনজ়ার লাগিয়ে বৃত্তাকারে মাসাজ করুন। সপ্তাহে একদিন প্রাকৃতিক ফেস প্যাক লাগালেও মুখ উজ্জ্বল থাকবে।
বিশেষ টোটকা: ব্রণ কখনও খুঁটবেন না। তাতে সংক্রমণ হতে পারে। তা ছাড়া ব্রণ শুকিয়ে যাওয়ার পরেও বিশ্রী দাগ থেকে যাবে।
No comments